
NL24 News
০৩ আগস্ট, ২০২৪, 10:41 AM

ইবাদত ও আমলে বিলম্ব নয়
মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর আখিরাত চিরস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষকে চিরস্থায়ী জীবন তথা আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তাই নেক আমল ও তাওবার কাজে দেরি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মুমিন বান্দারা কখনো কোনো ছোট পুণ্যের কাজের সুযোগও হাত ছাড়া করতে চায় না।
কারণ কেউ জানে না, কখন তার সময় শেষ হয়ে যাবে। ফলে যতক্ষণ মহান আল্লাহ হায়াত দিয়েছেন, ততক্ষণ নেক আমলের কোনো সুযোগই হাত ছাড়া করা যাবে না। কোনো গুনাহ হয়ে গেলে তা থেকে তাওবা করতে বিলম্ব করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ও সেই জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সত্কর্মশীলদের ভালোবাসেন। আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবেন? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বারবার করে না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৫)
এই জন্য মুমিনের উচিত, সাধ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব নেক আমল ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের পথকে সুগম করার চেষ্টা করা। অলসতা না করা। কারণ মানুষ কখন কোন পরিস্থিতিতে চলে যায়, তা কেউ জানে না। হতে পারে আজকে যে নেক আমলটি ব্যক্তির জন্য খুব সহজ, কাল তা কঠিনও হয়ে যেতে পারে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সাতটি বিষয়ের পূর্বে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো।
তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? না ওই ঐশ্বর্যের, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? না সেই বার্ধক্যের, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সে সবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট? না কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত কিনা সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত? (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)
অর্থাৎ যখন তুমি যে অবস্থাতেই থাকো, সাধ্যমতো নেক কাজ করতে থাকো। অবস্থা পরিবর্তনের অপেক্ষায় থেকে সময় পার করে দিয়ো না। আজ যে সচ্ছল, পকেটভর্তি যার টাকা-পয়সা, সে ভাবতে পারে, হাতে তো টাকা আছেই, যেকোনো সময় চাইলেই তো দান-সদকা করা যাবে, অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া যাবে অর্থকড়ি। এখন তাড়াহুড়ার কী আছে? কিন্তু এ নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে কোথায়, আজ হাতে যে অর্থসম্পদ রয়েছে, তা চিরদিনই থেকে যাবে? এ নিশ্চয়তা দেওয়া তো কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।
আবার আজ যে ব্যক্তি সুস্থ আছে, কাল সে অসুস্থ হয়ে নেক আমল করার সক্ষমতাও তো হারাতে পারে। তাই আজকের নেক আমল আজকেই করতে হবে। আগামীকালের অপেক্ষায় রেখে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি সুযোগই কাজে লাগাতে হবে।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যদি তাঁর কোনো বান্দার কল্যাণ করার ইচ্ছা করেন তাহলে তাকে কাজ করার তাওফিক প্রদান করেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তিনি কিভাবে তাকে কাজ করার তাওফিক দেন? তিনি বলেন, তিনি সেই বান্দাহকে মারা যাওয়ার আগে সৎকাজের সুযোগ দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪২)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক আমলের গুরুত্ব অনুধাবন করার তাওফিক দান করুন। আমিন