ঢাকা ২১ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
একদিনে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১ ইরানে হামলায় এ পর্যন্ত নিহত ৪৩০ : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের পরিচয় মিলেছে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ঢাকা মেডিকেল কলেজ পাঁচদিন টানা বৃষ্টির আভাস মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে দেশ: উপদেষ্টা সাখাওয়াত আ. লীগকে নিষিদ্ধ করিনি, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সিদ্ধান্ত ইসির: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা ছাগলনাইয়ায় সেফটিক ট্যাংক থেকে দুই শিশুর লাশ উদ্ধার রংপুর জেলার ৬ আসনে হাতপাখা প্রতীকের ৫ প্রার্থীর নাম ঘোষণা নতুনবাজার সড়ক অবরোধ ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের

ইউটিউব দেখে দুইবন্ধুর করা মিশ্র ফলের বাগানে ১০০ প্রজাতির ফলের চাষ

#

নিজস্ব প্রতিনিধি

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  4:43 PM

news image

শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের কামারিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী এমদাদুল হক বিদুৎ ও পূবালী ব্যাংকে চাকুরীজীবি উদয় কুমার ইউটিউবে ফল বাগানের সাফল্য দেখে তারাও ঠিক করে একটি মিশ্র ফল বাগান করতে। পরে তারা যৌথভাবে কামারিয়া গ্রামের এক কৃষকদের কাছ থেকে ২৫ একর জমি ২০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত বছর বাগানের কাজ শুরু করেন তারা। ২০২০ সালে মাল্টা, সিডলি পেয়ারা, বিভিন্ন জাতের কুল, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, ড্রাগন, বারোমাসি আম, লিচু, লটকন, পেপে, লেবু, সৌদী খেজুরসহ মোট ১০০টি প্রজাতির ফলের চাষ করেন তারা। এর মধ্যে কিছু বিদেশী উন্নত জাতের ফলের মধ্যে এভকাডো, ফ্রাই ছবেদা, মালবেরি, বিভিন্ন জাতের ফলের পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছেন। মিশ্র ফলের বাগান করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন এমদাদুল হক বিদুৎ ও উদয় কুমার নামের এ দুইবন্ধু।

তারা এ বাগানের নাম দিয়েছে ইউএনবি এগ্রো। তাঁরা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে ইউটিউবে দেখে এ উদ্যোগ নেন। আর তাদের এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অন্যরাও মিশ্র বাগান করার আগ্রহী হয়ে উঠছে। জমি লিজের টাকা, বাগানের পরিচর্যা, চারা কেনা, বাগানের চারপাশে ও উপরে জিআই তার আর সূতার জালের বেষ্টনি দেওয়াসহ সর্বমোট তাদের খরচ হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। তাঁদের শ্রম আর যত্নে এক বছরের মাথায় ব্যাপকভাবে ফলন আসতে শুরু করেছে থাই পেয়ারা, পেঁপে আর আপেলকুলের। ফলনের অপেক্ষায় মালটা, চায়না আর দার্জিলিংয়ের কমলার। এরই মধ্যে তাঁরা বাগানের পেয়ারা, পেঁপে আর আপেল কুল বিক্রি করেছেন লাখ টাকার উপরে। প্রায় বিচিহীন আর সুমিষ্ট থাই পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমানে বাগান থেকেই পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার নিজেদের সফলতার কথা তুলে ধরে এমদাদুল হক বিদুৎ দৈনিক মুক্তখবরকে বলেন, আমি আসলেও ব্যবসা করি। আমার প্রবাসী বোনের কাছ থেকে আর্থিক দিক দিয়ে সকল ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি আমরা। ইউটিউব দেখে আমাদের প্রথম ফল চাষে আসলেও আমার বড় বোনের অবদান ছিলো বেশি। এটি একটি লাভজনক চাষ। ধানসহ অন্য ফসল বাদ দিয়ে এই ফলের চাষ করলে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবে। আমরা এখন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া শুরু করেছি। আমাদের ফলের বাগানের বয়স ১ বছর হলেও আমরা বাগান থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। বাগানের প্রথম দিকে মাল্টা বেশ ধরেছিলো। ২ লাখ টাকার মত বিক্রি করেছি। আর এখন পেয়ারার বাগিং কাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রি করতে পারবো। এখন পযর্ন্ত ১ লাখ পেয়ারা বাগিং করা হয়েছে। আরোও দুই একদিনের মধ্যে ১ লাখের মত বাগিং করা হবে। আর আমরা বরই বিক্রি শুরু করেছি। এখন পযর্ন্ত ২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। আর কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার বরই বিক্রি করবো। আশাকরছি আগামী তিন বছরেই আসল টাকা তুলে লাভের মুখ দেখবো। বন্ধু উদয় কুমার দৈনিক মুক্তখবরকে বলেন, আমি ব্যাংকে চাকুরি করি। আমারা দুই বন্ধু মিলে আনেকদিন থেকে পরামর্শ করছিলাম কি করলে লাভবান হওয়া যায়। আর এ থেকে ইউটিউব দেখে দুইবন্ধু মিলে এ মিশ্র ফল বাগান শুরু করেছি। আমরা এ বাগান করার ফলে আমরা সফল হয়েছি। পশাপাশি এলাকায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আমি  ব্যাংকে চাকুরির পাশাপাশি এ বাগানে সময় দিয়ে থাকি। আগে বাগানে কম আসলেও এখন বাগানে একদিন না আসলে থাকতে পারি না। এই সফল দুই বন্ধুর মিশ্র ফলের বাগানের সাফল্যের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতিদিন আসছে আগ্রহী বেকার যুবকরা। তারা বাগানে এসে মুগ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি বাগান করার খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নিচ্ছে তাঁদের কাছ থেকে। তারাও শুরু করছে বাগান করার কাজ। পাশের গ্রামের রায়হান জানান, আমি ওই দুই বন্ধুর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এমন বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে কেউ এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারবেন। এতে বেকারত্ব দূরসহ এলাকা হবে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। আর এ বাগানে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করে থাকে। ওই বাগানে পোকামাকড় দমনে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। কৃষি শ্রমিক রহমত আলী বলেন, আমাদের গ্রামে বড় কোন মিল কারখানা নাই। এই বাগান হওয়াতে এখানে কাজ করে সংসার চলতাছে আমগর। পোলাপান গরেও লেহাপড়া করাবার পাইতাছি। এদিকে ফলের এই বাগান নিয়মিত পরিদর্শন করে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ার কথা জানান শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মুহিত কুমার দে। পরিদর্শন করে তিনি বলেন, এ মিশ্র ফলের বাগানে সকল পরামর্শসহ সহযোগিতা করা হবে। এখানকার ফল চাষে বিদেশী ফল আমদানী অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। আগে আমাদের ধারনাই ছিলো না শেরপুরের সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ হবে। এদিকে ওই দুই বন্ধু বাগানে ফল চাষের পাশাপাশি শুরু করেছেন মাছ চাষ, কবুতর, মুরগী পালন। তার এসব উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন আরো অনেকেই।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম