ঢাকা ১৯ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
জাতীয় ট্যালেন্ট হান্ট ক্রিকেটে সাপাহারের ২ শিক্ষার্থী স্বর্ণের দামে বড় পতনের পূর্বাভাস আগামীকাল সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘোষণা ১১ মাসে রাজস্ব আদায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা: এনবিআর দেশে ফিরেছেন ২৯ হাজার ৭৩ হাজি ঈদযাত্রার ১২ দিনে সড়কে ঝরল ৩১২ প্রাণ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়ন চান রিজভী জনসংযোগ-নিরাপত্তার মিশ্রণে দায়িত্ব পালনে এসএসএফের সদস্যদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান সন্ধ্যায় হাসপাতালে যাবেন খালেদা জিয়া বন্দর নবীগঞ্জে পাষণ্ড স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

আল কোরআনে ইশারা ভাষা

#

০৩ নভেম্বর, ২০২৪,  10:58 AM

news image

পারস্পরিক যোগাযোগ ছাড়া পৃথিবীতে জীবন যাপন করা প্রায় অসম্ভব। আর পারস্পরিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম মানুষের মুখের ভাষা, কিন্তু মানুষ সব সময় কথা বলতে সক্ষম হয় না। জন্মগত ত্রুটির কারণে বহু মানুষ কথা বলতে পারে না। আবার অনেকে দুর্ঘটনার কারণে ভাষা হারিয়ে ফেলে।

পারস্পরিক যোগাযোগে এসব মানুষ ইশারা ভাষা ব্যবহার করে থাকে। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে ইশারা ভাষার প্রয়োগ দেখানো হয়েছে, যা একই সঙ্গে ইশারা ভাষার স্বীকৃতি, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রমাণ করে।

ইশারা ভাষার পরিচয়

সাধারণত অঙ্গভঙ্গি ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে যে ভাষা প্রয়োগ করা হয় তাকে ইশারা ভাষা বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় ইশারা ভাষা হলো, এমন বিষয়গুলোকে ভাষার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া যাকে প্রকৃতপক্ষে বয়ান তথা বর্ণনার জন্য প্রয়োগ করা হয় না। তবে প্রয়োজনের তাগিদে তাকে ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া হয়। যেমন—চুপ থাকা, দেহভঙ্গির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা ইত্যাদি।

(নুরুল আনওয়ার : ২/২০১; আল ইত্তিসালুল ইনসানি ওয়া দাউরুহু ফিততাফাউলিল ইজতিমায়ি, পৃষ্ঠা ৭৫)

আল কোরআনে ইশারা ভাষা

ড. মুহাম্মদ আমিন মুসা আহমদ (রহ.) বলেন, পবিত্র কোরআনের প্রায় চার হাজার ৪৮০টি আয়াতে মৌখিক ভাষা ছাড়া যোগাযোগের ধারণা পাওয়া যায়, যা পবিত্র কোরআনের মোট আয়াতের প্রায় ৭২ শতাংশ। পবিত্র কোরআনের ১১৪ সুরার মধ্যে ১১১ সুরা থেকে ভাষাহীন যোগাযোগ প্রমাণ করা সম্ভব, যা মোট সুরার ৯৭ শতাংশ। (আল ইত্তিসালু গাইরুল লাফজিয়্যি ফিল কোরআনিল কারিম, পৃষ্ঠা ২২)

ইশারা কথার বিকল্প

পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে ইশারাকে কথা বা মৌখিক ভাষার বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন—মারইয়াম (আ.) সন্তানের ব্যাপারে নানা প্রশ্নে জর্জরিত করা হলে তিনি সন্তানের কাছেই তাঁর পরিচয় জানার ইঙ্গিত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর মারইয়াম সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করল। তারা বলল, যে কোলের শিশু তার সঙ্গে আমরা কিভাবে কথা বলব?’(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২৯)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে তিন দিন তুমি ইশারা ছাড়া কথা বলতে পারবে না।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৪১)

কোরআনে ইশারা ভাষার মাধ্যমগুলো

ইশারা ভাষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত সব মাধ্যমেরই বর্ণনা এসেছে। র মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত সব মাধ্যমেরই বর্ণনা এসেছে।

যেমন—

১. চোখ : চোখ মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শোনে তখন তারা যে সত্য উপলব্ধি করে তার জন্য তুমি তাদের চোখ অশ্রু বিগলিত দেখবে।’

(সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৩)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, আফসোস ইউসুফের জন্য। শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং সে ছিল অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট।’

(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৪)

২. মুখমণ্ডল : চেহারা বা মুখমণ্ডলকে বলা হয় অন্তরের আয়না। মানুষের মনের ভাব সহজেই চেহারায় প্রস্ফুটিত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে।’

(সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।’

(সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮)

৩. হাতের নড়াচড়া : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ হাতের নড়াচড়া (ক্রিয়াকর্ম) দ্বারা মানুষের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না, তা হলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’

(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৯)

আয়াতে কৃপণতা ও বেহিসাবি খরচের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তার ফল-সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য হাতে হাত ঘর্ষণ করতে লাগল (আক্ষেপ করছিল), যখন তা মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়ে গেল।’

(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪২)

৪. মাথার নড়াচড়া : মাথার নড়াচড়ার মাধ্যমেও মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, তোমরা এসো, আল্লাহর রাসুল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদের দেখতে পাবে তারা দম্ভভরে ফিরে যায়।’

(সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হায়, তুমি যদি দেখতে! যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সম্মুখে মাথা নত করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ও শ্রবণ করলাম।’

(সুরা : সাজদা, আয়াত : ১২)

৫. দেহভঙ্গি : দেহের ভঙ্গিতে মানুষের অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তিরই মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে। এটা এ জন্য যে তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় সুদের মতো। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।’

(সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

শরিয়তে ইশারা ভাষার গ্রহণযোগ্যতা

সাধারণ লেনদেনের ক্ষেত্রে কথা বলতে অক্ষম এমন ব্যক্তির ইশারা গ্রহণযোগ্য। তবে সাক্ষ্য হিসেবে ইশারা গ্রহণযোগ্য নয়। ফকিহ আলেমরা বলেন, ‘বোবা (যে কথা বলতে সক্ষম নয়) ব্যক্তির ইশারা শরিয়তে গ্রহণযোগ্য। ইশারা সেসব ক্ষেত্রে মৌখিক ভাষার স্থলাভিষিক্ত হবে, যেখানে কথা বলা আবশ্যক এবং যাতে অঙ্গীকার জড়িত থাকে। সুতরাং সব চুক্তির ব্যাপারে ইশারা গ্রহণযোগ্য। যেমন—বেচাকেনা, ভাড়া, বন্ধক, বিয়ে। সব দায়মুক্তির ব্যাপারে ইশারা গ্রহণযোগ্য। যেমন—তালাক, দাস স্বাধীন করা এবং কোনো বিষয়ে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করা। এভাবে স্বীকারোক্তির ব্যাপারে ইশারা গ্রহণযোগ্য। স্বীকারোক্তি ছাড়া হদ বা দণ্ডবিধির অন্য কোনো ব্যাপারে বেশির ভাগ ইমামের মতে ইশারা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন—সাক্ষ্য দেওয়া। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেন, যদি ব্যক্তি ইশারার মাধ্যমে কথা বোঝাতে সক্ষম হয়, তবে ইশারার মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে। ইশারা গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে বোবা ব্যক্তির লিখতে সক্ষম হওয়া ও না হওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।’(আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা : ১/২৭৮; ফাতহুল কাদির : ৭/৩৯৭)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম