
ফয়জুল ইসলাম
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, 9:55 PM

হাত ভাঙার চিকিৎসা করাতে এসে লাশ হয়ে ফিরল স্কুল শিক্ষার্থী
সাভারে দালালের মাধ্যমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভাঙা হাতের অপারেশন করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় তাপস মন্ডল (১৪) নামের এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় নিহতের স্বজনদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রবিবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার তালবাগ মহল্লায় অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিহতের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। এর আগে শনিবার রাত ১০ টার দিকে ওই কিশোরের হাত ভাঙার অপারেশনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেয়ার দুই ঘণ্টা পর মারা যায় তাপস। নিহত তাপস গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার কান্দাপারা গ্রামের শশী মন্ডলের ছেলে। সে স্থানীয় আশরাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। এর আগেও হাসপাতালটিতে ভুল চিকিৎসায় একাধিক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। নিহতের স্বজনরা জানায়,
গত শুক্রবার বিকেলে ফুটবল খেলতে গিয়ে তাপসের হাতের হাড় ভেঙে যায়। এঘটনায় স্থানীয় ফার্মেসি ব্যবসায়ী আবুলের পরামর্শে ৩৫ হাজার টাকা চুক্তিতে অপারেশনের জন্য সাভারের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শনিবার রাত ১০টার দিকে অপারেশনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া পুশ করলে তাপস অসুস্থ হয়ে পড়ার কিছুক্ষন পরই মারা যায়। নিহতের মামা উত্তম কুমার বলেন, শনিবার রাত ১০ টায় হাসপাতালের ডাক্তার আসার আগেই তাপসকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। পরে রাত ১২ টায় অপারেশনের ডাক্তার এসে বলেন অপারেশন করা যাবে না, সমস্যা আছে। ডাক্তার চলে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে তাপসকে আইসিইউতে নিতে হবে। পরে অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সাভারের সুপার ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানেই তাপস মারা যায়। এখানে হাতের অপারেশন করতে গিয়ে মানুষ মারা যায় কিভাবে? আমাদের সঠিক পরামর্শ দেওয়া হলে আমরা প্রয়োজনে পঙ্গু হাসপাতালে নিতাম। তাহলে হয়তো আমার ভাগ্নেটা বেঁচে থাকত। নিহত কিশোরের বাবা শশী মন্ডল বলেন, আমার আদরের ছেলেটাকে ওরা ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলল। ছেলে মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করে। কিন্তু হাতের হাড় ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় কি মানুষ মারা যায়? হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার কারণেই ছেলেটা মারা গেছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই সাভার সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. অহিদ বলেন, ‘আমি হাসপাতালে ছিলাম না। এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে জানতে পেরেছি গতকাল রাতে ওই কিশোরকে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে একটি ইনজেক জন পুশ করেন সেন্টাল হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ডা.কামরুজ্জামান জনি। এর পরে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সাভার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আবু তাহের বলেন, ‘চিকিৎসা করতে গেলে একটু ভুল হবেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ কেন উঠছে জানতে চাওয়া হলে তা এড়িয়ে যান তিনি। স্থানীয়দের অভিযোগ এর আগেও ওই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাই তারা হাসপাতালটির নাম দিয়েছে মানুষ মারার হাসপাতাল। এতো কিছুর পরেও প্রশাসন ওই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। একের পর এক ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হওয়ায় অন্যান্য হাসপাতালেও অর্থ খরচ করে চিকিৎসা নিতে ভয় পাচ্ছেন রোগীরা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এবিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ না পেলেও আমরা প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এঘটনায় ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।