
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫ মার্চ, ২০২২, 10:59 AM

রুশ গণমাধ্যমে নতুন নীতি, অস্থায়ীভাবে সাংবাদিকদের প্রত্যাহার করে নিল বিবিসি
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রুশ সামরিক বাহিনী নিয়ে ভুলভাল সংবাদ পরিবেশন করলেই যে কাউকে জেলহাজতে পুরে দেওয়ার রাশিয়া নতুন আইন পাস করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্থায়ীভাবে রাশিয়া থেকে সাংবাদিকদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। বিবিসি পরিচালক টিম ডেবি যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার গণমাধ্যম নীতির সমালোচনা করে বলেছেন, মুক্ত সাংবাদিকতাকে অপরাধী করে তোলার প্রয়াসই করছে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিক ও অন্যান্য কর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নাই। রাশান ফেডারেশন যে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমরা ুনা, কেবল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তারা অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ুক। আমি তাদের সাহস, পেশাদারিত্ব ও অধ্যবসায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’ সাংবাদিকদের সরিয়ে নেওয়ার পরও বিবিসি যুদ্ধের যথাযথ খবর পাঠককে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছে। টিম ডেবি বলেন, আমরা সঠিক তথ্যই পাঠককে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বদ্ধ পরিকর। লাখো রুশ নাগরিক বিবিসি ফলো করছেন। ইউক্রেনে থাকা আমাদের সাংবাদিক ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য সাংবাদিকরা ইউক্রেন যুদ্ধের সবশেষ খবর আপনাদের পৌঁছে দেবে।’ তিনি জানান, বিবিসির রাশান ভাষার ওয়েবসাইটটিতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে লাখো পাঠক ঢুঁ মেরেছেন সর্বশেষ তথ্য জানতে। ইউক্রেনজুড়ে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার পরও ক্রেমলিন এখনও একে ‘যুদ্ধ’ বলতে নারাজ। ইতোমধ্যে রাশিয়াতে বিবিসির ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে, লাটভিয়ার সংবাদমাধ্যম মেডুজা, রেডিও লিবার্টিও তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করেছে বলে রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা রাইআইএ জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের প্রত্যাহার করে নিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, তারা দেশটির বাইরে থেকে রাশিয়ার সংবাদ প্রচার করবে। গত শুক্রবার কানাডাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ ঘোষণা করেছে, তারা দেশটি থেকে সংবাদ প্রচার করা বন্ধ করে দেবে। সিএনএনও কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে কড়াকড়ি চলছে রুশ সংবাদ মাধ্যমগুলোর উপর। গত বৃহস্পতিবার আরেকটি রেডিও স্টেশন ‘ইকো অব মস্কো’কে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে হয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। এই রেডিওতে ইউক্রেইনের সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়েছিল, যেখানে রুশ সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়। সম্প্রচার বন্ধ হলেও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে খবর দিয়ে যাচ্ছে ‘ইকো অব মস্কো’। আর এর প্রধান সম্পাদক আলেক্সেই ভেনেদিক্তভ রয়টার্সকে বলেছেন, কোনো চাপেই নিজেদের সম্পাদকীয় নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবেন না তারা। ইউক্রেন যুদ্ধে শুরুর পর রাশিয়ায় সোশাল মিডিয়ার উপরও সরকারের নিয়ন্ত্রণ চলছে। রাশিয়া সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধকে ‘না’ বলে লাইভে এক সঙ্গে বিদায় নিল দেশটির একটি টেলিভিশন স্টেশন রেইন টিভি’র সব কর্মী। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের বিরোধিতার মাধ্যমে ‘সীমা লঙ্ঘন করায়’ রুশ কর্তৃপক্ষ টেলিভিশনটির সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।এরপর নাটকীয়ভাবে লাইভ সম্প্রচারের মধ্যে টেলিভিশনটির সব কর্মী এসে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেয় বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সসংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়। টিভি স্টেশনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নাতালিয়া সিন্দেয়েভা বলেন, তাদের সব কর্মী একসঙ্গে লাইভ সম্প্রচারে এসে ‘যুদ্ধকে না’ বলে একে একে বিদায় নেয়।এরপর রেইন টিভির এক বিবৃতিতে সম্প্রচার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। রেইন টিভির কর্মীদের বিদায়ের ভিডিওটি ইতোমধ্যে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।