ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

যেসব কাজ হালাল উপার্জনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে

#

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪,  10:56 AM

news image

সহিহ মুসলিমের এক দীর্ঘ বর্ণনায় নবী (সা.) মুসলমানদের অকল্যাণ ও ক্ষতিকর বস্তু থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁড়ালেন। অতঃপর লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল, আল্লাহর শপথ! তোমাদের ব্যাপারে আমার কোনো কিছুর আশঙ্কা নেই।

তবে আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পার্থিব সৌন্দর্য ও চাকচিক্যের ব্যবস্থা করে রেখেছেন এ সম্পর্কে তোমাদের ব্যাপারে আমার আশঙ্কা আছে। এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, কল্যাণের পরিণামে কি অকল্যাণও হয়ে থাকে? রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী বলেছিলে? সে বলল, আমি বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল! কল্যাণের সঙ্গে কি অকল্যাণ আসবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, কল্যাণ তো অকল্যাণ বয়ে আনে না। তবে কথা হলো, বসন্তকালে যেসব তৃণলতা ও সবুজ ঘাস উৎপন্ন হয় এটা কোনো পশুকে ডায়রিয়ার প্রকোপে ফেলে না বা মৃত্যুর কাছাকাছিও নিয়ে যায় না। কিন্তু চারণভূমিতে বিচরণকারী পশুরা এগুলো খেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেলে।

অতঃপর সূর্যের দিকে তাকিয়ে পেশাব-পায়খানা করতে থাকে। অতঃপর জাবর কাটতে থাকে। এগুলো আবার চারণভূমিতে যায় এবং এভাবে অত্যধিক খেতে খেতে একদিন মৃত্যুর শিকার হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তাকে এর মধ্যে বরকত দেওয়া হয়।

আর যে ব্যক্তি অসৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সে অনেক খাচ্ছে; কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারছে না।

(মুসলিম, হাদিস : ২৩১১)

উপরোক্ত হাদিসে নবী করিম (সা.) যখন ধন-সম্পদের ব্যাপারে তাঁর আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তখন এক সাহাবি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, আমরা তো সৎ পন্থায় যেমন—ব্যবসা, কৃষিকাজ, গনিমত ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জনকারী। এভাবে সম্পদ অর্জন তো ভালো। কারণ ধারকর্জ থেকে মুক্ত হয়ে নিবিড়ভাবে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করা যায়। তাহলে ভালো জিনিস কিভাবে ক্ষতিকর হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে নবীজি (সা.) তখন বলেন, হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন অবশ্যই ভালো ও উত্তম।

কিন্তু অতিরিক্ত বিলাসিতা কল্যাণকর নয়। কারণ এর মাধ্যমে ইবাদতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত থাকার কারণে ইবাদত থেকে মন উঠে যায়।

মূলত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই প্রকার লোকের কথা উল্লেখ করেছেন।

১. বেশি সম্পদ উপার্জনকারী। আর যারা ধন-সম্পদের পেছনে ছুটতে ছুটতে কল্যাণের পথ হারিয়ে ফেলে।

২. মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। যে ব্যক্তি তার উপার্জিত সম্পদ দুনিয়ার প্রয়োজনমাফিক যথাযথ ব্যয় করে। কোনো ধরনের অপচয় ও কৃপণতা করে না এবং সম্পদের কিছু অংশ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে।

হাদিসবিশারদরা উক্ত হাদিসে উল্লিখিত উপমার ব্যাপারে দীর্ঘ পর্যালোচনা করেছেন এবং এটিকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।

জাইন ইবনে মুনির (রহ.) বলেন, এই হাদিসে উপমা দেওয়ার মত আরো অভিনব কয়েকটি দিক রয়েছে। যেমন—

ক. সম্পদ উপার্জন ও তার সমৃদ্ধিকে শস্য উৎপাদন ও ফলনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

খ. সম্পদ উপার্জনের পেছনে আজীবন দৌড়ানোকে খাদ্যের প্রতি চতুষ্পদ জন্তুর আকর্ষিত হওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

গ. অধিক সম্পদ উপার্জন ও জমানোকে জন্তু-জানোয়ারের উদরপূর্তি করে আহারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

ঘ. সম্পদের লালসা মানুষের মধ্যে কৃপণতা সৃষ্টি করে এবং এর মোহ মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এই লালসা হলো ওই চতুষ্পদ জন্তু ন্যায়, যাদেরকে অতিরিক্ত আহার থেকে জোরপূর্বক দূর করতে হয়। এখানে এই স্বভাবের নিন্দা বোঝানোর জন্য চমকপ্রদ ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ঙ. পরহেজগারিতাকে ওই জন্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যে পরিমিত আহার করে বিশ্রাম নেয় এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। যাতে ভালোভাবে হজম হয়।

চ. অসৎ পথে উপার্জিত সম্পদের পরিণামকে অসতর্ক বেখবর জানোয়ারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যাদের উদরপূর্তির সময় হুঁশ থাকে না। ফলে একসময় খাবার তাদের মৃত্যুর কারণ হয়। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার : ১১/২৪৮)

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম