
NL24 News
১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, 2:15 PM

মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ আনায় আলিবাবার নারীকর্মীকে চাকরিচ্যুত
ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ করা নারীকে চাকরিচ্যুত করেছে চীনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা। ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, একজন সহকর্মী এবং এক ক্লায়েন্ট তাকে ধর্ষণ করেছে। এর জবাবে তাকে বরখাস্ত করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোম্পানির সুনাম নষ্ট করতে তিনি মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ওই নারী আগস্টে প্রকাশ্যে তার অভিযোগ আনেন। কারণ, তার দাবি আলিবাবা এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার অভিযোগ ব্যবসা সংক্রান্ত এক সফরের সময় তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালানো হয়।
এ অভিযোগে তার ওই সহকর্মীকে তখন বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। ওই নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ যে ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে, তিনি এখনও পুলিশি তদন্তাধীন রয়েছেন। চীনে কর্মক্ষেত্রে কিভাবে নারীরা হয়রানির শিকার হন তা জোরালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এই ঘটনা। সরকার সমর্থিত পত্রিকা ডাহি ডেইলিকে ওই নারী বলেছেন, গত মাসে বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে। তাকে দেয়া একটি চাকরিচ্যুতির কপিও প্রকাশ করেছে ওই পত্রিকা। এতে বলা হয়েছে, ওই নারী কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে সমাজে শক্ত উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে কোম্পানির অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে ওই নারীর দাবি, আমি কোনো ভুল করিনি। অবশ্যই কোম্পানির এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবো না। আমার অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য ভবিষ্যতে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। তাকে চাকরিচ্যুতির কথা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন তার আইনজীবী। এ বিষয়ে চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
নির্যাতিত নারী তার ওপর চালানো হয়রানির বিষয়ে এগার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, এক সফরে তাকে নিয়ে হোটেল কক্ষে মদ্যপ অবস্থায় ধর্ষণ করে তারই এক সহকর্মী। এ সময় তিনি ছিলেন অচেতন। তার এ অভিযোগ নিয়ে টুইটারের মতো চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ওয়েইবো’তে ঝড় শুরু হয়ে যায়। ওই নারী অভিযোগ করেন, তার ওই সহকর্মী সিনিয়র ম্যানেজারিয়াল পদে দায়িত্বে ছিলেন। একবার তিনি তাকে আলিবাবার হ্যাংঝৌয়ে অবস্থিত প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে জিনান শহরে নিয়ে যান একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে বৈঠকের কথা বলে। সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে নৈশভোজের সময় তাকে এলকোহল পানের নির্দেশ দেন তার ওই সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২৭ শে জুলাই রাতে ওই ক্লায়েন্ট তাকে চুম্বন করেন। পরের দিন হোটেলকক্ষে তার ঘুম ভাঙে। তিনি নিজেকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পান। রাতে কি ঘটেছে কিছুই স্মরণ করতে পারেন না। ওই নারীর দাবি তিনি নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। এতে দেখা গেছে তার ওই সহকর্মী ওই রাতে চারবার তার কক্ষে প্রবেশ করেছেন। হ্যাংঝৌতে ফিরে তিনি এ বিষয়টি আলিবাবার মানবসম্পদ বিভাগকে এবং সিনিয়র ম্যানেজমেন্টকে জানান। তিনি দাবি তোলেন ওই সহকর্মীকে বরখাস্ত করতে। তার অনুরোধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় মানবসম্পদ বিভাগ। কিন্তু পরে তারা কোনোই পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে জনগণের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে আলিবাবা। পরে তারা মিস্টার ওয়াং নামের ওই সহকর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। কোম্পানির তরফে বলা হয়, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়া দু’জন নির্বাহীও পদত্যাগ করেছে। আলিবাবার ইস্যু করা এক মেমো’তে বলা হয়, জোর করে মদ পানের কঠোর বিরোধী আলিবাবা। আরো বলা হয়, ওই অভিযুক্ত ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে। বলেছে, তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছে। ওই সময় অভিযোগকারী ছিলেন মদ্যপ। কিন্তু মিস্টার ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আর অগ্রসর হয়নি। তবে প্রসিকিউটররা ওই ক্লায়েন্টকে গ্রেপ্তার অনুমোদন করেছে। তার ডাকনাম ঝাং। ওদিকে তাকেও তার কোম্পানি বরখাস্ত করেছে।