
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ মার্চ, ২০২৩, 12:23 PM

বিআইডব্লিউটিএর কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ
-সিএমএম আদালতে মামলা
সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ে হেনেস্তার শিকার হয়েছে এক সাংবাদিক। ওই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবুল হোসেনের নেতৃত্বে তারিকুল আলম খান নামে এক সাংবাদিককে বেধরক মারপিট করা হয় প্রতিষ্ঠানটির মধ্যেই। যদিও বিআইডব্লিউটিএ এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে বিচার চেয়ে ওই সাংবাদিক গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে পাঠিয়েছেন। এদিকে সরকারি দপ্তরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীর বাহিনীর হাতে সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
মামলার এজাহারে সাংবাদিক তারিকুল আলম খান অভিযোগ করেন, তিনি দৈনিক মুক্ত খবরের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। পেশাগত কাজে গত ১৯ মার্চ তিনি বিআইডব্লিটিএর প্রধান কার্যালয়ে যান। একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় ওই কর্মকর্তার রুম থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, তুই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিস, তোকে আমি মেরে ফেলবো। এ কথা বলে তাকে লাঞ্চিত করে। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে তাকে (সাংবাদিক তারিকুল আলম) লোহার রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহতও করে।
এ সময় আশেপাশে থাকা লোকজন তাকে রক্ষা করে। মামলায় তিনি এও অভিযোগ করেন, সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করে। গত ১৩ মার্চ এ নিয়ে সাংবাদিক তারিকুল আলম খান দৈনিক মুক্ত খবরে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেও গ্রেপ্তার হয়নি আবুল হোসেন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই সংবাদে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করা হয়েছে, মারপিট করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয় আসামি আবুল হোসেন তার পকেট থেকে ৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে গুম ও খুন করার হুমকি দেয়। পরে তিনি সেখান রেখে রক্ষা পেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান।
মামলার বিষয়ে সাংবাদিক আলম বলেন, আসামি আবুল হোসেন একজন দূর্ধর্ষ লোক। আকস্মিক তার ওপর হামলা করে। তিনি গতকাল মামলা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সুবিচার আশা করছেন। তিনি সাংবাদিক নেতাদেরও বিষয়টি অবহিত করবেন। গত কয়েকদিন অসুস্থ থাকায় তিনি বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করেননি। আবুল হোসেন বিআইডব্লিটি এর অর্থ বিভাগের উচ্চমান সহকারীর পদে আছে। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র সিবিএ সভাপতি পদে আছেন। বিআইডব্লিউটিএতে শ্রমিক কর্মচারীদের সংগঠন সিবিএ থাকলেও আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি সিবিএ সংগঠন তৈরি করা হয়। সম্প্রতি আদালত আবুল হোসেনের তৈরি করা সিবিএ সংগঠনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায়ও দিয়েছে।
তবুও ওই সিবিএ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মচারীদের বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। আবুল হোসেনের সিন্ডিকেট বিআইডব্লিউটিএ আধিপত্য বিস্তার করছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, কর্মচারীদের মারপিট, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনেও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে করছে।
কর্মচারী হয়েও আবুল হোসেন বিআইডব্লিটিএর গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ কোন কর্মচারীর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ নেই। অর্থ বিভাগের উচ্চমান সহকারীর পদে থেকে বেতন ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধা নিলেও আবুল হোসেন দাপ্তরিক কোন কাজ করেন না। প্রতিদিন তিনি এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে আড্ডা দেয়া, কর্মচারীদের বদলি কোন, পছন্দের লোকদের বদলি করার তদবিরে ব্যবস্থা থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে আবুল হোসেন গত কয়েক বছরে বিআইডব্লিটিএ নিয়ন্ত্রণে রেখে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেয়া রীতিমতো ফৌজদারী অপরাধ। কোন সরকারি অফিসে সরকারের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক আমাদের কাছে লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে ঘটনা জানালে আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো। আমরা বিষয়টি খোজ খবর নিচ্ছি। সূত্র : দৈনিক সংবাদ