ঢাকা ২০ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো সিরিয়াল কিলার গ্রেপ্তার

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ জানুয়ারি, ২০২২,  2:39 PM

news image

বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানো এক ‘সিরিয়াল কিলার’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি র‌্যাবের। র‍্যাব বলছে—‘দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামি’ ও বাউল মডেল মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম ওরফে খুনি হেলালকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেলিম ফকিরের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে র‍্যাব। সেখানে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

র‍্যাব জানিয়েছে, আনুমানিক ছয় মাস আগে এক ব্যক্তি ইউটিউবে প্রচারিত একটি গানের বাউল মডেল সম্পর্কে র‌্যাবকে তথ্য দেয় যে, ওই মডেল সম্ভবত বগুড়ার বিদ্যুৎ  হত্যা মামলার আসামি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব ওই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে র‌্যাব নিশ্চিত হয়। এরপর র‌্যাব ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩-এর অভিযানে গতকাল বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে মো. হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকিরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজের অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। র‍্যাবের কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সেলিম ফকির জিজ্ঞাসাবাদে জানায়—সে ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদুৎ হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফেরারি আসামি।  সেলিম ফকির এও জানায়—সে আরও দুটি হত্যা মামলার আসামি। ১৯৯৭ সালে বগুড়ার বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলার আসামি বলে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।’ র‍্যাব জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে বগুড়ায় চাঞ্চল্যকর বিষ্ণু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। গ্রেপ্তার করা হেলাল ২১ বছর বয়সে ওই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় বলে জানা যায়। এভাবেই হেলাল বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেন এবং এলাকায় ‘দুর্ধর্ষ হেলাল’ নামে পরিচিতি পায়। র‍্যাব আরও জানিয়েছে, সেলিম ফকির আরও জানায়—২০০০ সালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ধারালো দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তাঁর বাঁ-হাতে মারাত্মক জখম হয় এবং বাঁ-হাত পঙ্গু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি ‘দুর্ধর্ষ হেলাল’, ‘হাত লুলা হেলাল’ ইত্যাদি নামে এলাকায় পরিচিত হয়ে ওঠেন। র‍্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২০০১ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহমুদুল হাসান বিদ্যুৎকে (২০) পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করে। যার মামলা নম্বর ০২(১০)২০০১; ধারা-৩০২/৩৪। ওই মামলায় আদালত সেলিম ফকিরকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। এ ছাড়া২০০৬ সালে বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রবিউল নামের এক ব্যক্তিকে দুর্বৃত্তেরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গ্রেপ্তার করা হেলাল ওই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এ ছাড়া হেলাল ২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় করা একটি চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হন। একই সঙ্গে ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যা মামলার বিচার কাজও চলমান থাকে। ২০১৫ সালে ওই চুরির মামলায় তিনি জামিনে মুক্ত হন এবং একই দিন বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে হেলালের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রয়েছে।  র‍্যাব জানিয়েছে, হেলাল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং এলাকায় মুদি দোকানদারি শুরু করেন। পরবর্তীকালে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে এলাকায় তাঁর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১০ সালে করা চুরির মামলায় ২০১৫ সালে জামিনপ্রাপ্তির দিনে বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি সুকৌশলে এলাকা ত্যাগ করে ফেরারি জীবনযাপন শুরু করেন। প্রথমে তিনি বগুড়া থেকে ট্রেনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন। পরবর্তীকালে কমলাপুর থেকে ট্রেনে চট্টগ্রামে চলে যান এবং সেখানকার আমানত শাহ মাজারে ছদ্মবেশ ধারণ করে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। এরপর চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেটের শাহজালাল মাজারে চলে যান হেলাল। সিলেটে গিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে আরও কিছুদিন অবস্থান করেন।জানা যায় যে, বিভিন্ন সময়ে হেলাল বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে অবস্থান করতেন। তিনি কিশোরগঞ্জ ভৈরব রেলস্টেশনে নাম-ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে সেলিম ফকির নাম ধারণ করেন। আনুমানিক পাঁচ বছর আগে হেলাল ওরফে সেলিম ফকির নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশের একটি গানের শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশে বাউল গান গাইছিলেন। তখন শুটিংয়ের একজন তাঁকে গানের মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলে ‘ভাঙা তরী ছেড়া পাল’ শিরোনামের জনপ্রিয় গানের বাউল মডেল হিসেবে সেলিম ফকিরকে দেখা যায়। র‍্যাব জানিয়েছে, সেলিম ফকির প্রায় সাত বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারি জীবনযাপন করেন এবং প্রায় চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের পাশে একজন নারীর সঙ্গে সংসার করে আসছেন। বিভিন্ন রেলস্টেশনে তিনি বাউল গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেলিম ফকিরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম