ঢাকা ২১ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
এ পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৩৬ হাজার ৬০১ হাজি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮ সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এশিয়া কাপ আর্চারিতে সোনা জিতলেন বাংলাদেশের আলিফ পরমাণু ইস্যুতে ‘রেড লাইন’ স্পষ্ট করল ইরান সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ৬ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির ঘোষণা আসছে ২৫৩ জনের গুমের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন প্রবাসীরা ফেরার সময় শুল্ক ছাড়াই আনতে পারবেন যে ১৯ পণ্য বাংলাদেশকে দুই প্রকল্পে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক আসছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘এরিক’

নারায়ণগঞ্জে অবৈধ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত শিশুখাদ্য

#

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২,  1:06 PM

news image

নারায়ণগঞ্জের গণপরিবহনে হরেক ধরনের পণ্যের হকারদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো। এদের মধ্যে আবার বাহারি খাদ্যপণ্যের হকারই বেশি। তবে গণপরিবহনে দেদারছে বিক্রি হওয়া এসব খাদ্যপণ্যের বেশিরভাগেরই নেই কোনো মান। রঙিন মোড়কে মোড়া এসব পণ্যের নেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনও। সম্প্রতি রূপগঞ্জের একটি বাসে দেখা যায় আরএমএস ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ফুড লিমিটেড নামে একটি অনুমোদনহীন কোম্পানির তৈরি খাদ্যপণ্যের দারুণ বিকিকিনি। সেসব পণ্যের মোড়কে নেই বিএসটিআইর অনুমোদনের সিল বা উৎপাদনের বিস্তারিত। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক শ্রমিক কাজ করছে সেখানে। নেই কোনো খাদ্য বিশেষজ্ঞ,

তারাই  অনুমোদনহীন বিষাক্ত রাসায়নিক ও রং ব্যবহার করে শিশুদের কাছে আকর্ষণী খাদ্য তৈরি ও মোড়কজাত করছে।কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কেউ বিষয়টি নিয়ে গত চার বছরের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যোগাযোগের পর সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেছেন, শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। কারখানা কর্তৃপক্ষও অবৈধভাবে কারখানা চালু রাখা ও অনুমোদনহীন খাদ্যপণ্য বিপণনের কথা স্বীকার করেছে। তবে তারা দাবি করেছে, সব কিছু (সংস্থা) ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছে তারা।  অনুসন্ধানে দেখা যায়, আরএমএস কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের প্যাকেটের গায়ে কারখানার ঠিকানা দেওয়ায় হাটাবো, রূপগঞ্জ, নারয়ণগঞ্জ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় কারখানাটি রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের বীর হাটাবো এলাকায়। গত ৪ বছর ধরে কারখানাটি বিএসটিআইর অনুমোদন ছাড়ই লিচি, লিচি ড্রিংক, আইসললি, ললিপপ, ফ্রুটো ড্রিংকসহ শিশুদের জন্য নানা রকম খাদ্য তৈরি ও মোড়কজাত করে বিক্রি করে আসছে। কারখানাটিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটি বাইরে থেকে বন্ধ বোঝানোর জন্য কারখানার প্রধান গেটটি সারাক্ষণ বাইরে দিয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে। ভেতরে নারী ও শিশু শ্রমিকসহ ৪০-৫০ শ্রমিক নানা ধরনের খাদ্যপণ্য তৈরি ও মোড়কজাতের কাজ করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। নেই ফুড টেস্টিং ল্যাব ও কেমিস্ট। শ্রমিকরাই পানিতে মেশাচ্ছে নিম্নমানের রং ও বিষাক্ত রাসায়নিক। একাধিক নারী ও শিশুশ্রমিক জানায়, তাদের পারিশ্রমিক কম দিতে হয় বলেই শ্রমিক হিসেবে তাদের পছন্দ করা হয়। এদিকে কারখানাটির কোনো প্রকার অনুমতিপত্র নেই বলে জানিয়েছে, কল-কারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তর। বিএসটিআইর কাছ থেকে কোনো প্রকার অনুমতি নেয়নি তারা। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, গাজীপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে করা হচ্ছে বিপণনও। আর এসব খাবার খেয়ে নানা রকম শারীরিক জটিলতায় পড়ছে শিশুরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৪ বছর ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কে মাসোহারা দিয়ে কারখানাটি চালানো হচ্ছে। ফলে তারা অবৈধ কারখানাটির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না।   জানা গেছে, কারখানাটির মালিক রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত ইউসূফ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি। ইউসূফ চৌধুরী মাঝে মাঝে কারখানায় এলেও কারখানাটি পরিচালনা করেন মোশারফ নামে একজন। তিনি কারখানার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া কারখানায় সুপারভাইজার হিসেবে রয়েছে জাহিদ নামে আরেকজন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা বলেন, প্রশাসন ও আপনাদের মতো সবাই এসে দেখা করে যায়। সবার সাপোর্টেই তো আমাদের কারখানা টিকে আছে।   আমরা বিএসটিআইর অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। শিগগিরই পেয়ে যাব।দাউদপুর ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, কারখানাটি শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছিল। তবে তারা অন্যান্য অনুমতিপত্র নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নূরজাহান আরা খাতুন বলেন, খাবারের অতিরিক্ত ক্যামিকেল ব্যবহারের কারণে ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, পেট খারাপসহ বিভিন্ন বড় ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। এসব ক্যামিকেলযুক্ত খাবার শিশুদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। জেলা কলকারখানা প্রতিষ্ঠান ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া মুক্ত খবরকে বলেন, এআরএমস কারখানা নামে কোনো কারখানা আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। আর সেখানে শিশু শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো আরেকটি অপরাধ। আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নূসরাত জাহান মুক্ত খবরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিএসটিআইর মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএসটিআইর পরিচালক (সিএম) নুরুল আমিন মুক্তখবরকে বলেন, কারখানাটি আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

logo

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. নজরুল ইসলাম