
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ মে, ২০২২, 12:33 PM
থমকে গেল ইউক্রেন-রাশিয়া শান্তিবৈঠক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, একইসঙ্গে চলছিল দুই দেশের শান্তি আলোচনা। কীভাবে যুদ্ধ থামিয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। মঙ্গলবার রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই দেশের প্রতিনিধিই জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তি আলোচনা আপাতত স্থগিত। কোনওপক্ষই সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে পারছে না।
রাশিয়ার অভিযোগ
শান্তিবৈঠক ভেস্তে যাওয়ার জন্য সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা। রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো বলেছেন, “কিয়েভ কার্যত আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গেছে। আপসমীমাংসার সামান্য সুযোগটুকু তারা রাখেনি।”
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভের বক্তব্য, ইউক্রেন নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে না। তারা পশ্চিমা দেশগুলোর অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে কার্যত ব্যবহার করছে নিজেদের স্ট্র্যাটেজি সাজানোর জন্য। এতে ইউক্রেনের কোনও লাভ হবে না।” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, “আমরা সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন তা হতে দিচ্ছে না।”
ইউক্রেনের বক্তব্য
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরামর্শদাতা মিখাইলো পদোলিয়াক জানিয়েছেন, আলোচনা স্থগিত করতেই হল কারণ, রাশিয়া কোনওরকম দাবিই মানতে রাজি নয়। তারা কোনও সমাধানসূত্রেও পৌঁছাতে চাইছে না। রাশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত নেতিবাচক বলে অভিযোগ করেছেন পদোলিয়াক।
সুইডেন-ফিনল্যান্ড নিয়ে রাশিয়া
সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোয় যোগদান নিয়ে সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার রাশিয়া জানিয়েছে, ওই দুই দেশ ন্যাটোয় যোগ দিতে চাইলে তাদের কিছু বলার নেই। বিষয়টিকে তারা হুমকি হিসেবেও দেখছে না। কারণ, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আগেও একাধিক ন্যাটোর মহড়ায় এই দুই দেশ যোগ দিয়েছে। দেখার বিষয় হল ওই দুই দেশের জমি ন্যাটো সেনাঘাঁটি তৈরিতে ব্যবহার করে কি না। তা করা হলে রাশিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করলে রাশিয়াকে তার উত্তর দিতে হবে।
খেরসনে রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী
রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মারাত খুসনুলিন মঙ্গলবার খেরসনের দক্ষিণের এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন। কথা বলেন সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। ইউক্রেনের খেরসন প্রদেশ রাশিয়ার বৃহত্তর পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নেবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন বলে ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমের দাবি। বস্তুত, মে মাসের গোড়ায় খেরসন প্রদেশটি পুরোপুরি দখল করে নেয় রাশিয়া। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে খেরসনে রুশ মুদ্রা রুবল চালু করে দেওয়া হয়। খেরসনের বর্তমান প্রশাসনও রাশিয়াপন্থিদের হাতে। কিছুদিনের মধ্যেই খেরসনকে সরকারিভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণার জন্য স্থানীয় প্রশাসন মস্কোর কাছে আবেদন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইইউ’র গ্যাস সিদ্ধান্ত
২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের উপর থেকে নির্ভরতা সম্পূর্ণ সরিয়ে নেওয়া যাবে বলে মনে করছে ব্রাসেলস। মঙ্গলবার একটি ২১০ বিলিয়ন ইউরোর পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছে ব্রাসেলস। রয়টার্স সেই পরিকল্পনার খসড়া দেখেছে বলে জানিয়েছে। তাতে ঠিক হয়েছে, ২০৩০ নয়, ২০২৭ সালের মধ্যেই ইউরোপের দেশগুলো অপ্রচলিত শক্তিকে মূলধারায় নিয়ে আসবে। ফলে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের প্রয়োজন কার্যত শূন্য হয়ে যাবে। তার আগেও অন্য দেশ থেকে গ্যাস এবং তেল নেওয়ার পরিমাণ অনেক বাড়ানো হবে। এই মুহূর্তে রাশিয়ার কাছ থেকে ৪০ শতাংশ গ্যাস নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। তেল নেয় ২৭ শতাংশ।
ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল আদালতের দল
আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল আদালতের একটি বড় দল ইউক্রেনে গিয়ে পৌঁছেছে। তারা ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখবেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধপরাধের নমুনা সংগ্রহ করবেন। আন্তর্জাতিক আদালতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে, তার খতিয়ে দেখতেই এই দল ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালত জানিয়েছে, ইউক্রেনে যে তদন্তকারী দল পাঠানো হয়েছে তা ঐতিহাসিক। আন্তর্জাতিক আদালতের ঠিক করে দেওয়া এত বড় তদন্তকারী দল এর আগে কখনও এভাবে তদন্ত করেনি বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রশাসন।
অ্যাজভাস্টালের আহত সেনারা
রবিবার থেকে মারিউপোলের অ্যাজভাস্টালের কারখানা থেকে আহত সেনাদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। সোম এবং মঙ্গলবারও বেশ কিছু সেনাকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাশিয়া তাদের রুশ সেনার দখল করা অঞ্চলে নিয়ে গেছে। সেখানে তাদের হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে। আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, রাশিয়া ওই ইউক্রেনীয় সেনাদের ছাড়বে কি না। তাদের ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হবে কি না। মঙ্গলবার মস্কোর পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অ্যাজভাস্টালের সেনাদের যেন কোনওরকম বন্দিপ্রত্যার্পণ চুক্তিতেও ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া না হয়। কারণ ওই সেনারা সকলেই নিও নাৎসি। রাশিয়ার আদালতে তাদের বিচার হবে।
কানে জেলেনস্কি
এদিকে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা নিয়ে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বক্তৃতা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কি ভিডিওবার্তায় গোটা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী এবং অভিনেতাদের ইউক্রেনের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। এক সময়ের অভিনেতা জেলেনস্কির বক্তৃতায় মুগ্ধ কানে যোগ দেওয়া বহু শিল্পী। প্রকাশ্যে তারা ইউক্রেনের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সূত্র: ডয়েচে ভেলে