
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৫ মে, ২০২৪, 2:06 PM

ইউরোপকে যেভাবে দুই ভাগ করছে চীন
পশ্চিমা আধিপত্যের জাল ছিঁড়তে বিশ্বজুড়ে ফাঁদ পাতছে চীন। গেল কয়েক দশকে বেইজিংয়ের উত্থান রীতিমতো ঘুম হারাম করে দিয়েছে আমেরিকাসহ ইউরোপের মার্কিন মিত্রদের। এর মধ্যেই গোটা ইউরোপকে দুই ভাগে ভাগ করার নীলনকশা আঁকছে শি জিনপিং সরকার। সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্টের ইউরোপ সফর যেন সেই নীলনকশাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তারই কিছু চিত্র উঠে এসেছে জার্মাস সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে। পরমাণু শক্তিধর ফ্রান্স দিয়ে সম্প্রতি নিজের ইউরোপ সফর শুরু করেন শি জিনপিং। এরপর গিয়েছিলেন সার্বিয়া ও হাঙ্গেরীয় সফরে। ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও চীনা পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ব্যারট্রাম লাঙ বলেন, ইউরোপের ওই তিন দেশের সঙ্গে বেইজিংয়ের বিশেষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এ বিশ্লেষক মনে করেন, চীনা নেতৃত্ব ইউরোপকে ক্রমেই দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। চীনা প্রেসিডেন্টের এবারের সফরে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন লাঙ।এ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে চীনের সমর্থন দেয়া এবং কমদামি চীনা বৈদ্যুতিক গাড়িতে ইউরোপের বাজার ছেয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ। ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি ইউরোপে রপ্তানি করা চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সৌরপ্যানেল তৈরিতে ভর্তুকি দেওয়া হয় কি না, তা তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তি হিসেবে এসব পণ্যের ওপর শুল্কও বসানো হতে পারে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে চীন সফর শেষে মাঁখো তাইওয়ান সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনায় ইউরোপের অংশগ্রহণের বিষয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হওয়া মানে ওয়াশিংটনের ‘বাহন’ হওয়া নয়। ইউরোপীয় সংসদের সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুজা আনা ফ্যারেন্সি মনে করেন, সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না হলেও বেলগ্রেড সফর করে জিনপিং দেখাতে চেয়েছেন তিনি ইইউর প্রতিবেশীদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। অন্যদিকে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই মস্কোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে ইইউ সদস্য হাঙ্গেরি। এ ছাড়া চীনের বিরোধিতা করে ইইউর করা বিভিন্ন প্রস্তাবেও কয়েকবার ভেটো দিয়েছে দেশটি। হাঙ্গেরিতে গড়ে তোলা হচ্ছে চীনা গাড়ি তৈরির কারখানাও। এই অবস্থায় পহেলা জুলাই থেকে ইইউর সভাপতি দেশ হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছে হাঙ্গেরি। জিনপিং আশা করছেন, দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে। এ ছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় সার্বিয়াকে বিপুল ঋণ দিচ্ছে বেইজিং। এসব ঋণের অর্থে হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ার মধ্যে একটি দ্রুতগতির রেললাইন নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফ্যারেন্সি জানান, চীনের সামগ্রিক কৌশল হলো ইউরোপের ঐক্যকে ভেঙে ফেলা এবং ইইউর বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদাভাবে সম্পর্ক বাড়ানো।